বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে উদ্বেগ বাড়ছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাত ও অর্থনৈতিক ধসের কারণে জাতিসংঘ দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের অনুরোধে নীতিগতভাবে রাখাইনের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে কোন শর্তে এই করিডর চালু হবে, তা নিয়ে এখনো জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র সোমবার প্রথম আলোকে জানায়, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সাম্প্রতিক ঢাকা সফরের পর মানবিক করিডর নিয়ে নীতিগত সম্মতি দেয় সরকার। এখন শর্তাবলি নির্ধারণ করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, "নীতিগতভাবে আমরা সম্মত হয়েছি। তবে আমাদের কিছু শর্ত রয়েছে। সেই শর্ত পূরণ হলেই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আমরা সহযোগিতা করব।"
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে করিডর চালু করা ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে কার্যকর কোনো স্বীকৃত প্রশাসন নেই, যা করিডরের নিরাপত্তা ও মানবিক ত্রাণের সুষ্ঠু বণ্টনে বড় বাধা হতে পারে। আরাকান আর্মি যদি মানবিক সহায়তার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে, তাহলে ত্রাণের উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
জাতিসংঘের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইনে পণ্য প্রবেশের পথ বন্ধ, খাদ্য উৎপাদন ভেঙে পড়েছে এবং সামাজিক সেবা কার্যত অচল। মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যে সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। এতে কেবল রোহিঙ্গা নয়, রাখাইনের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীরও বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাখাইন করিডর মানবিক লক্ষ্য নিয়ে খোলা হলেও তা মাদক ও অবৈধ অস্ত্র পাচারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের নীতিনির্ধারকেরা তাই জাতিসংঘের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনায় যাবতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি নিরসনের ওপর জোর দিচ্ছেন। তাঁরা মনে করেন, কেবল বাংলাদেশের ওপর নির্ভর না করে অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোকেও রাখাইনে মানবিক সহায়তায় যুক্ত করার পথ খুঁজতে হবে জাতিসংঘের।
রাখাইনের মানবিক সংকট এখন আর শুধু একটি দেশের সমস্যা নয়, তা গোটা অঞ্চলের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।
Comments 0