কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর কাশ্মীরে চলছে ব্যাপক ধরপাকড়। হামলার পরপরই শ্রীনগরের বাজার এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে টহল শুরু করে ভারতের আধাসামরিক বাহিনী। রোববার রাতেও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। টানা চার রাত ধরে চলছে এই পাল্টাপাল্টি গুলি বিনিময়।
ভারতীয় সামরিক বাহিনীর দাবি, পাকিস্তান কোনো উসকানি ছাড়াই গুলি চালিয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে পাল্টা জবাব দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পাকিস্তান সরকার এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গুলির ভয়ে তারা কৃষিকাজ বা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না। ডাওকে এলাকার হরদেব সিং বলেন, ‘আমরা মাঠে যেতে পারছি না।’ লানজোতের শওকাত আওয়ান জানান, ‘ভয়ে আমরা এখন আর কাঁপি না, এটাই আমাদের বাস্তবতা।’
পেহেলগামে হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ইসলামাবাদকে দায়ী করেছে। যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। ভারত ভিসা বাতিল, সিন্ধু পানি চুক্তি পুনর্বিবেচনা, আকাশসীমা বন্ধসহ বিভিন্ন পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘কঠিন জবাব’-এর হুমকি দিয়েছেন। অন্যদিকে পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আব্বাসি বলেছেন, ‘ভারতের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৩০টিরও বেশি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র।’
ধরপাকড় ও ঘরবাড়ি ভাঙার অভিযোগ
পেহেলগাম হামলায় জড়িত সন্দেহে প্রায় ২ হাজার বাসিন্দাকে আটক করা হয়েছে। যদিও অধিকাংশের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক গ্রেপ্তারের নথি করা হয়নি। এ ছাড়া সন্দেহভাজনদের বাড়ি ভাঙচুর ও ধ্বংস করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অন্তত ৯টি বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মুররান গ্রামের আসিফ শেখের বোন ইয়াসমিনা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমার ভাই যদি দোষীও হয়, তাতে পুরো পরিবারের অপরাধ কী?’
কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতারা এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, তবে যেন নিরীহ মানুষ শাস্তি না পায়।’ কেন্দ্রীয় আইনপ্রণেতা আগা রুহুল্লাহও বলেন, ‘একটি হামলার জন্য গোটা কাশ্মীরকে শাস্তি দেওয়া উচিত নয়।’
সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
কাশ্মীর ইস্যুতে উসকানিমূলক প্রচারের অভিযোগে ভারত আজ পাকিস্তানের বেশ কিছু ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করেছে। নিষিদ্ধ হওয়া চ্যানেলের তালিকায় রয়েছে ডন, সামা টিভি, জিও নিউজ, এআরওয়াই নিউজ ইত্যাদি।
আন্তর্জাতিক মহল থেকেও প্রতিক্রিয়া আসছে। চীন ও জাতিসংঘ দুই পক্ষকেই সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও ভারতের পাশে থাকার কথা জানিয়ে পেহেলগাম হামলার নিন্দা জানিয়েছে। উইলসন সেন্টারের বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, ভারত যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত সরাসরি বাধা দেবে না।
তবে এখনই ভারত–পাকিস্তান সংকট নিয়ে মার্কিন প্রশাসন সক্রিয় হবে না বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। রাশিয়া-ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধের মতো ইস্যুতে ব্যস্ত থাকায়, এই সংকটের সমাধান আপাতত দেশ দুটির হাতেই ছেড়ে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
Comments 0