ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বা হামাসের নতুন নেতৃত্ব—কাউকেই গত সপ্তাহে হওয়া যুদ্ধবিরতিটি দীর্ঘস্থায়ী করতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে না।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বা হামাসের নতুন নেতৃত্ব—কাউকেই গত সপ্তাহে হওয়া যুদ্ধবিরতিটি দীর্ঘস্থায়ী করতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের চাপে নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হতে কার্যত বাধ্য হয়েছেন।
গত মে মাসে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলেও নিজের কট্টর ডানপন্থী মিত্রদের চাপে নেতানিয়াহু সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসছিলেন। কিন্তু এখন ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠান যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য নেতানিয়াহু নিতান্তই অনিচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছেন।
চুক্তি হওয়ার পরপরই নেতানিয়াহু তাঁর ক্ষুব্ধ মন্ত্রীদের আশ্বস্ত করেছেন, এটি সাময়িক এবং তিনি পুরোপুরি এই চুক্তির শর্ত মেনে চলবেন না। জানা যাচ্ছে, তিনি যুদ্ধবিরতির প্রতিবাদে পদত্যাগ করা কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এবং আরেক কট্টরপন্থী নেতা বেজালেল স্মোত্রিচকে আশ্বাস দিয়েছেন, খুব শিগগির যুদ্ধ আবার শুরু হবে। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় ছয় সপ্তাহ চলবে।
এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। সেখানে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ সামরিক প্রত্যাহার এবং জীবিত সব জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে আরও ফিলিস্তিনি বন্দীকে ছেড়ে দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এই আলোচনা আদৌ শুরু হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ–এর বিশ্লেষক আমির টিবন লিখেছেন, ‘নেতানিয়াহুর সামনে যুদ্ধবিরতি বানচাল করার দুটি উপায় রয়েছে—এক. দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করা (যা তিনি আগেও বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে করেছেন) এবং দুই. পশ্চিম তীরে সংঘর্ষ উসকে দেওয়া। সেখানে এখন আগুন জ্বলছে। তিন জিম্মির ফিরে আসাকে যখন লাখো ইসরায়েলি উদ্যাপন করছিলেন, সে মুহূর্তে পশ্চিম তীরের কট্টরপন্থী ইহুদি বসতির বাসিন্দারা কয়েকটি ফিলিস্তিনি গ্রামে বাড়িঘর ও গাড়িতে আগুন ধরিয়েছেন।’
এর বাইরে নেতানিয়াহু দাবি করে বসতে পারেন, হামাস চুক্তির শর্ত মানছে না। গাজা ও লেবাননের ছোটখাটো সংঘর্ষও যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার সম্ভাব্য অজুহাত হতে পারে। আসলে আগামী দুই সপ্তাহে নেতানিয়াহু কী করেন, তার ওপর এই যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
অনেকে বলছেন, নেতানিয়াহু শান্তির পথে হাঁটতেও পারেন এবং সরকার ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঝুঁকিও নিতে পারেন। সে পরিস্থিতিতে তিনি হামাসকে পরাজিত করার কৃতিত্ব নিয়ে নিজেকে একজন যুদ্ধনেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন। এ মুহূর্তে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ইসরায়েলি ভোটার যুদ্ধের অবসান চান। ফলে নেতানিয়াহু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভ্যাস থেকে বেরিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারলে তিনি হোয়াইট হাউসের সমর্থন পাবেন। ইসরায়েল হোয়াইট হাউসের সমর্থন পেলে তা ট্রাম্পের সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এবং ইরানকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
সমস্যা হলো, হামাস ও তার মিত্র ইসলামিক জিহাদও যুদ্ধবিরতি স্থায়ী করতে চায় না। রোববার বন্দী বিনিময়ের সময় অস্ত্রসজ্জিত অবস্থায় দেখা যায় হামাসকে। হামাসের এ শক্তি প্রদর্শন যদিও সীমিত ছিল, তবু এটি একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে হামাস এখনো টিকে আছে, তারা এখনো অবশিষ্ট জিম্মিদের নিয়ন্ত্রণ করছে এবং গাজায় এখনো কোনো বিকল্প প্রশাসন নেই। সোমবার এক বিবৃতিতে হামাস ঘোষণা দিয়েছে, তাদের নেতৃত্বেই গাজা আবার ঘুরে দাঁড়াবে।
এদিকে মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিনে একটি অন্তর্বর্তীকালীন টেকনোক্র্যাট সরকার গঠনের আলোচনা চলছে। পশ্চিম তীরে যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ রয়েছে, তার মাধ্যমে গাজা পরিচালনার কথাও উঠেছে। কিন্তু বাস্তবে এখনো কেউ দায়িত্ব গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। ফলে হামাসই শূন্যস্থান পূরণ করছে। এর জন্য আংশিকভাবে দায়ী নেতানিয়াহু। কারণ, তিনি ১৫ মাস ধরে যুদ্ধপরবর্তী পরিকল্পনা করেননি বা এ বিষয়ে আলোচনা করতেই রাজি হননি।
আগামী সপ্তাহগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, হামাস সম্ভবত দ্রুত তার সামরিক শক্তি পুনর্গঠন শুরু করবে; কারণ, তারা এই যুদ্ধে যে ধ্বংসের শিকার হয়েছে, তার প্রতিশোধ নিতে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আগের মধ্যপ্রাচ্য সংকটের সময় দেখা গেছে, এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দুই পক্ষকে চুক্তি মানতে বাধ্য করার জন্য সক্রিয় হতেন। কিন্তু ট্রাম্প সে ধরনের প্রেসিডেন্ট নন। এর ফলে যদি নেতানিয়াহু ও হামাসের নেতৃত্ব পুনরায় যুদ্ধের পথে হাঁটে, তাহলে হয়তো কেউই তাদের থামাতে পারবে না; যদিও অধিকাংশ ইসরায়েলি, ফিলিস্তিনি এবং সারা বিশ্বের মানুষ এখন শান্তির জন্য অপেক্ষা করছে।
০৪টি কলেজের পাঠদানের অনুমতি প্রত্যাহার এবং ০১টি কলেজের পাঠদানের অনুমতি স্থগিতকরণ প্রসঙ্গে।
January 27, 2025
Comments 0